IPSAS
(International Public Sector Accounting Standards)
IPSAS (International Public Sector Accounting
Standards) হল একগুচ্ছ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অ্যাকাউন্টিং মানদণ্ড, যা পাবলিক সেক্টরের
আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতির জন্য ব্যবহৃত হয়। IPSAS-এর মূল উদ্দেশ্য
হলো সরকারি সংস্থাগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন আরও স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য এবং তুলনাযোগ্য করে তোলা। এটি সাধারণত accrual basis বা cash basis অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয়।
IPSAS-এর মূল বৈশিষ্ট্য:
1. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: IPSAS
সরকারি সংস্থাগুলোর আর্থিক লেনদেনের প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য কাঠামো সরবরাহ করে, যা স্বচ্ছতা ও
জবাবদিহিতা বাড়ায়।
2. তুলনাযোগ্যতা:
IPSAS অনুযায়ী প্রস্তুতকৃত আর্থিক প্রতিবেদনগুলো স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে তুলনাযোগ্য হয়।
3. Accrual
Basis: বেশিরভাগ
IPSAS মানদণ্ড
accrual basis-এ ভিত্তি করে কাজ করে। এর অর্থ হলো
আয় এবং ব্যয় সেই সময়ে স্বীকৃত হয়, যখন সেগুলো ঘটে, না যে সময়ে
নগদ অর্থ লেনদেন হয়।
4. Cash
Basis IPSAS: এই
পদ্ধতিতে শুধুমাত্র যখন নগদ লেনদেন হয় তখন তা আর্থিক প্রতিবেদনে
অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
IPSAS-এর গুরুত্ব:
- বৈশ্বিক মানদণ্ড মেনে চলা:
আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা আরও মানসম্মত ও সুসংহত হয়।
- দাতা সংস্থার আস্থা বৃদ্ধি:
দাতা সংস্থাগুলো IPSAS ভিত্তিক আর্থিক প্রতিবেদন দেখে বেশি আস্থা রাখে।
- ব্যবস্থাপনা উন্নতি:
সরকারি সংস্থাগুলোর সম্পদ ও দায়ের ওপর আরও ভালো নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার সুযোগ সৃষ্টি করে।
IPSAS-এর
উদাহরণ:
- IPSAS 1 - Presentation of Financial Statements: আর্থিক প্রতিবেদন
তৈরির নিয়মাবলী
নির্ধারণ করে।
- IPSAS 17 - Property, Plant, and Equipment: সরকারি সম্পদ এবং স্থায়ী সম্পত্তির হিসাব কেমন হবে তা নির্ধারণ করে।
- IPSAS 24 - Presentation of Budget Information: বাজেট তথ্য এবং আর্থিক প্রতিবেদনের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।
IPSAS অনুসরণে চ্যালেঞ্জ:
- প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব:
অনেক দেশে IPSAS বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল বা প্রযুক্তি নেই।
- খরচ বৃদ্ধি:
IPSAS বাস্তবায়নের
প্রাথমিক ব্যয় অনেক বেশি হতে পারে।
- সাংস্কৃতিক পার্থক্য:
স্থানীয় আর্থিক রিপোর্টিং চর্চার সঙ্গে IPSAS মেলে না।
IPSAS-এর
মূল বৈশিষ্ট্য:
1. Accrual
Basis Accounting: বেশিরভাগ
IPSAS স্ট্যান্ডার্ড Accrual
Basis Accounting-এ
ভিত্তি করে। অর্থাৎ, লেনদেন এবং ঘটনা সেগুলো সংঘটিত হওয়ার সময় রেকর্ড করা হয়, নগদ লেনদেনের সময় নয়।
উদাহরণস্বরূপ:
একটি
সেবার বিল প্রদান হওয়ার আগে তা আর্থিক প্রতিবেদন
হিসেবে স্বীকৃত হয়।
2. Cash
Basis Accounting: কিছু
IPSAS স্ট্যান্ডার্ড নগদ ভিত্তিক অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। এখানে কেবল তখনই লেনদেন রেকর্ড করা হয়, যখন নগদ লেনদেন ঘটে।
3. তুলনাযোগ্যতা: IPSAS
অনুযায়ী প্রস্তুতকৃত আর্থিক প্রতিবেদনগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সরকারি সংস্থার আর্থিক প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনাযোগ্য।
4. স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা: IPSAS
আর্থিক প্রতিবেদনগুলোকে নির্ভরযোগ্য এবং স্বচ্ছ করে তোলে, যা সরকারি সংস্থাগুলোর
জবাবদিহিতার মান উন্নত করে।
5. সংশোধিত তথ্য উপস্থাপন: IPSAS ব্যবহারকারী সংস্থাগুলো সম্পদ, দায়, আয় এবং ব্যয়ের সঠিক হিসাব প্রদান করতে সক্ষম হয়।
IPSAS-এর
কাঠামো ও শ্রেণি:
IPSAS প্রধানত
দুই
ধরনের
অ্যাকাউন্টিং
পদ্ধতি
ব্যবহার
করে:
1. Accrual
Basis IPSAS: এ
পদ্ধতিতে সম্পদ, দায়, আয় এবং ব্যয় তাদের আর্থিক প্রভাব সৃষ্টির সময় রেকর্ড করা হয়।
2. Cash
Basis IPSAS: এখানে
কেবলমাত্র নগদ লেনদেন ঘটে যাওয়ার সময় প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।
IPSAS-এর
প্রধান স্ট্যান্ডার্ডসমূহ:
1. IPSAS
1 - Presentation of Financial Statements: আর্থিক প্রতিবেদন কেমন হবে, তা নির্ধারণ করে।
2. IPSAS
2 - Cash Flow Statements: নগদ প্রবাহের
প্রতিবেদন তৈরির নিয়মাবলী নির্ধারণ করে।
3. IPSAS
17 - Property, Plant, and Equipment: স্থায়ী সম্পত্তি, যেমন: ভূমি, ভবন, এবং যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত তথ্য হিসাবের মানদণ্ড প্রদান করে।
4. IPSAS
24 - Presentation of Budget Information: বাজেট এবং আর্থিক প্রতিবেদন একসঙ্গে কিভাবে উপস্থাপন করা হবে, তা নির্ধারণ করে।
5. IPSAS
31 - Intangible Assets: অস্পর্ণীয় সম্পদ (যেমন: পেটেন্ট,
সফটওয়্যার) কীভাবে রেকর্ড করতে হবে তা নির্ধারণ করে।
IPSAS-এর
প্রয়োজনীয়তা:
1. আন্তর্জাতিক মানের আর্থিক প্রতিবেদন: IPSAS আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে, যা সরকারগুলোর মধ্যে
আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সামঞ্জস্য আনে।
2. দাতা সংস্থার আস্থা বৃদ্ধি: বিশ্বব্যাপী দাতা সংস্থাগুলো (যেমন: বিশ্বব্যাংক, IMF) IPSAS অনুসারে তৈরি করা প্রতিবেদনকে আরও নির্ভরযোগ্য মনে করে।
3. জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ:IPSAS-এর মানদণ্ড অনুসরণ
করে সরকারি সংস্থাগুলো তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার
কাছে জবাবদিহি করতে পারে।
4. সাশ্রয়ী ব্যবস্থাপনা: IPSAS
অনুসরণ করে সরকারি সংস্থাগুলো সম্পদ ও ব্যয়ের ব্যবস্থাপনা
আরও দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে।
IPSAS বাস্তবায়নের
চ্যালেঞ্জ:
1. প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব: অনেক দেশে IPSAS বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নেই।
2. উচ্চ খরচ: IPSAS বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় প্রশিক্ষণ, সফটওয়্যার এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন।
3. স্থানীয় আইন ও রীতিনীতির সাথে সংঘাত: অনেক দেশে স্থানীয় অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতি এবং আইন IPSAS-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ
নয়।
IPSAS বাস্তবায়নের
সুবিধা:
- সরকারি সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি।
- সঠিক এবং স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি।
- আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে তুলনাযোগ্যতা নিশ্চিত।
- দাতা সংস্থাগুলোর কাছে জবাবদিহিতা।
No comments:
Post a Comment